August 22, 2010

১০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো পিছিয়ে রয়েছে

ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণে সময় বাকি মাত্র চার মাস

বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তানুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা করতে হবে। কিন্তু মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি প্রতিষ্ঠান এখনো এ শর্ত পরিপালন করতে পারেনি।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে:
1. প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড,
2. মাইডাস ফাইন্যান্স,
3. ফার্স্ট লিজ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্ট,
4. বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি,
5. বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট,
6. ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট,
7. ফিডেলিটি অ্যাসেটস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ,
8. ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন,
9. উত্তরা ফাইন্যান্স এবং
10. বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর এক সার্কুলারে এ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। এতে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম পরিমাণ ২৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করার কথা বলা হয়।

কিন্তু এত স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মূলধন বাড়ানো সম্ভব হবে না উল্লেখ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঘোষিত নির্ধারিত সময় পেছানোর ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত সম্মত হয়নি।

বরং সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১২ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ‘ব্যাসেল-২’-এর বিধিবিধান ও শর্তাবলি কার্যকর হবে মর্মে একটি সার্কুলার জারি করে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত মূলধন থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বোনাস বা রাইট শেয়ার দেওয়ার মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তা করতে পারেনি।

উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে
1. প্রিমিয়ার লিজিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা;
2. মাইডাস ফাইন্যান্সের মূলধন ৪০ কোটি ৫০ লাখ;
3. ফার্স্ট লিজের মূলধন ৪০ কোটি ২০ লাখ;
4. বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের মূলধন ৪৪ কোটি ৪৩ লাখ;
5. বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের মূলধন ৪৪ কোটি;
6. ফিনিক্স ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৭০ লাখ;
7. ফিডেলিটি অ্যাসেটসের ৪৪ কোটি ৯০ লাখ;
8. ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি ৪০ লাখ;
9. উত্তরা ফাইন্যান্সের মূলধন ৩৯ কোটি ৬০ কোটি এবং
10.বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মূলধন ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে বে লিজিংয়ের রাইট শেয়ার ছাড়ার একটি প্রস্তাব সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) অনুমোদন করেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর রাইট শেয়ারের জন্য চাঁদা গ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে।

এ ছাড়া উত্তরা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার প্রস্তাব এসইসির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে এ কোম্পানিটিরও পরিশোধিত মূলধন বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করবে।

ফার্স্ট লিজ ২০০৯ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৭৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বোনাস শেয়ার সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে জমা হওয়ার পর এ কোম্পানিটির মূলধনও ন্যূনতম সীমা ছাড়িয়ে যাবে।

ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং এখনো সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। কোম্পানিটি চাইলে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে। তবে বোনাসের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করলে শর্ত পূরণের জন্য কোম্পানিটিকে রাইট শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব দিতে হবে।

বাকি কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাই মূলধন বাড়ানোর জন্য এসব কোম্পানির সামনে রাইট শেয়ারের প্রস্তাব করা ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান

* প্রথম আলো, ২২ আগস্ট ২০১০

No comments: