আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা মেটাতে গিয়ে টান পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এখন যে সঞ্চয় রয়েছে, তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
গভর্নর আতিউর রহমান রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও তার কেটে যাওয়ার আশা করছেন। তবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলার। সপ্তাহ খানেক আগে তা ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারে উঠেছিলো। কিন্তু এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ৮৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের আমদানি দেনা মেটানোর পর তা নেমে আসে।
আগামী দু-এক মাসের মধ্যে যদি রিজার্ভ না বাড়ে আর আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন মির্জ্জা আজিজ।
তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় মেটাতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
"আমাদের ফরেন এইড (বৈদেশিক সাহায্য) প্রবাহ ভালো না। অনেক সাহায্য পাইপলাইনে আটকে আছে। ছাড় হচ্ছে না। সেগুলো এলে রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকতো", বলেন মির্জ্জা আজিজ।
রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি বলেছেন, আমদানি ব্যয় কমাতে কমাতে প্রয়োজনীয় এবং বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে।
ওভার ইনভয়েচের (বেশি মূল্য দেখিয়ে আমদানি) মাধ্যমে পণ্য আমদানি হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখতেও বলেছেন সাবেক এ উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, জুন মাস থেকে আমদানি খাতে নিুমুখী ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। রেমিটেন্স প্রবাহও বাড়ছে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আশা করছি, আমদানি ব্যয় কমে আসবে। রিজার্ভের ওপরও চাপ কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আমদানি বাবদ সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে গত মে মাসে, ৩২৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর আগে কখনোই এক মাসে আমদানি খাতে এত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করেনি বাংলাদেশ।
গত পাঁচ মাস ধরেই ৩০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে। অন্যদিকে আকুর দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও এবার রেকর্ড হয়েছে। আকুর সদস্য দেশগুলো থেকে বেশি পণ্য আমদানি হওয়ায় দেনাও বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরের ১১ মাসে ৩ হাজার ৭৪ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত ২০০৯-১০ অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
২০০৯-১০ অর্থবছরে জুলাই-মে সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছিলো মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ২৯২ কোটি ৪৪ লাখ (২২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন) ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
তবে এ রপ্তানি আয়ের ৩৫ শতাংশ আবার চলে গেছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসিতে। অর্থাৎ তৈরি পোশাক খাতের সুতা, কাপড়সহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম আমদানিতে চলে গেছে এ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ (রেমিটেন্স) বাড়লেও এতে প্রবৃদ্ধি আগের বছরগুলোর চেয়ে কম। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে হয়েছিলো ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সদ্য সমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরে রেমিটেন প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের আগের আমলের শেষ সময়ে (২০০১ সাল) রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছিতে নেমে এসেছিলো। তখন প্রথমবারের মতো আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক করা হয়েছিলো।
কিন্তু ওই সময়ে ১০০ কোটি ডলার দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তবে এখন তা কঠিন। কারণ এখন চাল আমদানিতেই বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যে কোনো দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
Sat, Jul 16th, 2011
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
No comments:
Post a Comment