গত বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর মধ্যে যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে, সেখানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।
গত বছর বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৩০ লাখ ডলার যা আগের বছরের (২০০৯) তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সারা বিশ্বে একযোগে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
অবশ্য গত বছরের বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০৮ সালের চেয়ে কম। ২০০৮ সালে এক হাজার আট কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল।
ঢাকার মতিঝিলে বিনিয়োগ বোর্ডের নিজস্ব কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিকসহ বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুর, যার পরিমাণ ৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এরপর যথাক্রমে যুক্তরাজ্য (১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার), নেদারল্যান্ড (ছয় কোটি ৪০ লাখ ডলার), হংকং (ছয় কোটি ৩০ লাখ ডলার), আমেরিকা (পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ডলার), ভারত (চার কোটি ৩০ লাখ ডলার) থেকে বিনিয়োগ এসেছে।
গত বছর টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। এরপর যথাক্রমে ব্যাংকিং (১৬ কোটি ৩০ লাখ), বস্ত্র ও পোশাক (১৪ কোটি ৫০ লাখ), জ্বালানি (নয় কোটি ২০ লাখ) এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ এসেছে।
অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, গত বছর ভারত ও পাকিস্তানে বিনিয়োগ সংকুচিত হলেও বাংলাদেশে তা প্রসারিত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৩ সালে ১৯০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির দিক থেকে ১৪১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪। গত বছর এই অবস্থান ছিল ১২০। সেই হিসাবে বাংলাদেশ ছয় ধাপ এগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ বলেন, বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মাত্র এক দিনের মধ্যেই নিবন্ধনের কাজটি সারতে পারেন।
নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশে মোট বিনিয়োগ জিডিপির ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ এবং শিক্ষার হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে পারলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তা হলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান মির্জা আবদুল জলিল, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সদস্য আবু রেজা খান, শামসুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিনিয়োগ বোর্ডের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈশ্বিক চিত্র: প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বিশ্বে মোট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু ২০০৭ সালের চেয়ে ৩৭ শতাংশ কম।
গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ তিনটি দেশ হলো যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র (২২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার), চীন (১০ হাজার ৬০০ কোটি) ও হংকং (ছয় হাজার ৯০০ কোটি)।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গত বছর ভারতে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৬৪ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। তবে এটি ২০০৯ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। একইভাবে পাকিস্তানে ২০১ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এলেও তা ২০০৯ সালের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মালদ্বীপে। এই ছোট দ্বীপ দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। আর শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ বেড়েছে ১৮ শতাংশ। নেপালে বিনিয়োগ স্থবির রয়েছে। ভুটান ও আফগানিস্তানে কমে গেছে।
প্রথম আলো July 27, 2011
No comments:
Post a Comment