মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বের প্রায় সবগুলো প্রধান প্রধান মুদ্রার সাথে বাংলাদেশি টাকার দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। ২০১০ সালের ৩০ জুন এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ৬৯ টাকা ৪৩ পয়সা, এক বছর পর চলতি বছরের ৩০ জুন সেই এক মার্কিন ডলারের সরকারি দাম দাঁড়িয়েছে ৭৪ টাকা ১০ পয়সা। একই সময়ে এক ইউরোর দাম ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা। এক ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ১০৪ টাকা থেকে হয়েছে ১১৯ টাকা ০৪ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে কোনো মুদ্রার এত বেশি দরপতন খুবই উদ্বেগের কারণ বলে বিবেচিত হয়।
খোলা বাজারে মার্কিন এক ডলারের দাম এখন ৮০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। এখানেই শেষ নয় টাকা আরো মূল্য হারাবে এমনটাই মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা নিয়ে খেলতে গিয়ে টাকাকে এতটাই দুর্বল করে ফেলেছেন যে, বিদেশের প্রায় সকল মুদ্রার সাথে টাকার দাম কেবলি কমছে। মাত্র ক'বছর আগেও যেখানে থাই মুদ্রা বাথ এর সাথে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ছিল প্রায় সমান সমান, এখন তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। অন্য প্রায় সকল বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রার অবস্থা প্রায় একই রকম।
মরহুম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকার দশ বছরে টাকার শক্তি বেড়েছিল। টাকাকে প্রথমবারের মতো বিনিময়যোগ্য ঘোষণার পরও সে আমলে টাকার মূল্য হ্রাস পায়নি। টাকার মান সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াও ধরে রাখতে পারেননি। তিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ১৮ দফা টাকার অবমূল্যায়ন করে রেকর্ড করেছিলেন। সর্বশেষ আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাবস্থায় প্রথম দেড় বছর পর্যন্ত টাকার মান কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত এক বছর কেবলি মূল্য হারাচ্ছে। এখন এমন একটা সময়ে ডলারের সাথে টাকার মান দ্রুত পড়ে যাচ্ছে যখন পৃথিবীর অন্য প্রায় সকল মুদ্রার সাথে ডলারের অবস্থা দুর্বল।
গেল ক'বছর ধরেই দেশীয় মুদ্রা অব্যাহত চাপে ছিল। দেশের আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা ও সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একাকার হয়ে সামগ্রিক মুদ্রা ব্যবস্থাকেই মহা বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মূলত মুদ্রা সংকটের কারণে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ব্যাপক অসামঞ্জাস্য দেখা দিয়েছে। রফতানি আয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবার পরও বাণিজ্যিক ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে আরো অবনতি হচ্ছে। ফলে শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, সঞ্চয় বাড়ানো ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মতো অতি জরুরি কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থবিরতায় আক্রান্ত মুদ্রা ক্রমান্বয়ে তার ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে। পণ্যমূল্য বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
টাকার সামগ্রিক অবস্থা
সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মার্কিন এক ডলার সমান বাংলাদেশি ৭৪ টাকা। খোলা বাজারে এই দর বাংলাদেশি টাকায় ৭৮ টাকা পর্যন্ত উঠছে। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এই দর ছিল ৬৭ টাকা। এরপর ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত টাকা-ডলারের গড় দর ছিল সর্বোচ্চ ৬৯.১৮ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে ডলারের সাথে টাকা গড় মূল্য হারিয়েছিল মাত্র ২.১৮ টাকা। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরেই মূল্য হারিয়েছে ৫ টাকারও বেশি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে টাকার অবাধ বিনিময়যোগ্যতা চালু থাকার কারণে এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় না। আর্ন্তজাতিক মুদ্রার সাথে স্বনির্ধারিতভাবে বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। ১৯৯৬ সালে প্রতি ডলারের মধ্য দর ছিল ৪১ টাকা। ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে এই দর ছিল ৩৬ টাকা ৮৯ পয়সা। ৫ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছিল মাত্র ৪ টাকা ১১ পয়সা। প্রতিবছর গড়ে অবমূল্যায়ন হয়েছিল ১ টাকারও কম। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মাত্র দেড় বছরে এই অবমূল্যায়ন হয়েছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। বছরে গড় অবমূল্যায়ন দাঁড়ায় ৩ টাকা ২০ পয়সারও বেশি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শামনামলে ৮ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল এ দু'দফায় মোট ৭৫ পয়সা অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল।
বিনিময়যোগ্যতা শুরু যেভাবে
১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান প্রথম বারের মতো একটি সক্রীয় ও নমনীয় মুদ্রা বিনিময়হার নীতির কথা বলেন। এর ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশি টাকাকে পুরোপুরি বিনিময়যোগ্য করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সস্পন্ন করলেও বিভিন্ন বাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলো অনেকটাই ছিল প্রস্তুতিহীন। তারা বলছিল, বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন কার্যক্রম শুরু হলে দেখেশুনে ব্যবস্থা নেবে। অনেকটা প্রস্তুতিহীনভাবেই টাকাকে বিনিময়যোগ্য করার প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশন গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা বিনিময় হার ঘোষণা না করা, ডিলারদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হার ১৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে শতকরা ২০ ভাগে নির্ধারণ এবং বিভিন্ন ব্যাংককে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ব্যাংক রেইট নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের কিছুকিছু বৈঠক-সেমিনারও করেছিল। এসব বৈঠকে বিনিময়যোগ্যতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনাও হয়। অংশগ্রহণকারীরা বলেছিল কার্যক্রম শুরুর পর কি অবস্থা দাঁড়াবে, তা স্পষ্ট নয়।
এরপর থেকেই ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘোষণাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আসছিল। সে সময় তারা বলেছিল, মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মুদ্রার আন্তর্জাতিক তারল্যের সঙ্গে দেশি মুদ্রার যোগসূত্র তৈরি করা জরুরি। মুদ্রা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, চলতি ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রার যে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয় তা মূলত কৃত্রিম ব্যবস্থা। এর ফলে টাকার প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ব্যবসায়ীরা অনেকটা অন্ধকারে থেকে যেত। বিনিময়যোগ্যতা কার্যকর হলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
সে সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের গবেষণা সেল টাকার বিনিময়যোগ্যতার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বলেছিল, এর ফলে রফতানি আয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি এবং টাকাকে উপর্যুপরি অবমূল্যায়নের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। তারা বলেছিল, এর ফলে আমদানি মূল্য প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা বাড়লে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। অবশ্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন সহজে হস্তান্তরের সুবিধা পাবে এবং সর্বোপরি টাকার প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে সন্দেহের অবসান হবে। অপরদিকে ডিসিসিআই অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেছিল, বিনিময়যোগ্যতা চালুর শুরুতে আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এগুলো ছাড়াও উৎপাদন ব্যবস্থায় দক্ষতাজনিত সমস্যার কারণে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে ।
সে সময় রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এম আর খানকে চেয়ারম্যান করে ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশন গঠন করা হয়েছিল। এসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও অন্য একটি বিদেশি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন। এদের কাজ ছিল বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করা। স্থানীয় ব্যাংকাররা সে সময় এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও ব্যাপকভাবে মনে করেছিলেন, নতুন হলেও এশিয়ার অনেক দেশই এই ব্যবস্থার সুফল পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা শুরুর প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলেও সমস্যা কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব হবে।
তৎকালীন সরকার প্রধানত ম্যাক্রো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি, বিদেশি মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে টাকাকে অবাধ বিনিময়যোগ্য করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেছিলেন, টাকার বিনিময়যোগ্যতা চালুর পরই কেবল সত্যিকার অর্থনৈতিক অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে।
রেকর্ড অবমূল্যায়ন
টাকার আংশিক বিনিময়যোগ্যতা চালু থাকা সত্ত্বেও ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মোট ১৮ দফা অবমূল্যায়ন করে প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ১৬ টাকা ৭০ পয়সা কমানো হয়েছিল। ২০০১-০২ অর্থবছরে ১ মার্কিন ডলার সমান দাঁড়িয়েছিল ৫৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ১ মার্কিন ডলার সমান ছিল গড়ে ৩৮ টাকা ১৫ পয়সা। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে তা বেড়ে গড়ে ১ মার্কিন ডলার সমান হয়েছিল ৪০ টাকা ৮০ পয়সা। এর ফলে ওই ৫ বছরে ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য কমে ছিল মাত্র ২ টাকা ৬৫ পয়সা। এ হিসাবে প্রতিবছর গড়ে টাকার মূল্য কমেছিল মাত্র ৫৩ পয়সা করে। অথচ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে টাকার মূল্য কমেছিল ৩ দশমিক ৩৪ টাকা করে। সে সময় টাকার অবমূল্যায়ন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবরই বলতো রফতানিকারকদের সুবিধা দেবার জন্য টাকার মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী যে দেশের মুদ্রা বেশি শক্তিশালী হবে তারাই লাভবান হয়। বিশেষ করে সে দেশটি যদি আমদানিকারক হয় তাহলে তো কথাই নেই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বলতে গেলে ভারতীয় পণ্যের বাজার। বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার বিশ ভাগের এক ভাগ পণ্যও সে দেশে রফতানি করে না। তাই বাংলাদেশি মুদ্রা ভারতীয় মুদ্রা থেকে যত বেশি শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ তত বেশি লাভবান হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এক সময় বাংলাদেশি টাকা ভারতীয় টাকার তুলনায় শক্তিশালী থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই।
মুদ্রামান যখন স্থিতিশীল
আন্তর্জাতিক মুদ্রার সাথে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান তুলনামূলকভাবে ১৯৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সব থেকে স্থিতিশীল ছিল। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ইইসি'র অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ১৯৯৫ সালে বলেছিল, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে সরকার যে দূরদর্শিতা ও বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছিল, তার ফলে আশাতীত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। ওরা বলেছিল অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকলে বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্জিত সাফল্য অক্ষুন্ন রাখতে পারলে ২০১০ সালের মধ্যে তথা নতুন শতাব্দীর শুরুর দশকে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যান্য ইকোনমিক টাইগারদের সমপর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য হরতাল ধর্মঘট ও নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে একটি অনুকূল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে পারলেই এ রকম একটি আদর্শ অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
সে সময় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ রিজার্ভ এবং মুদ্রাস্ফীতির নিম্নহারের ওপর বিশেষ গুরুত্বআরোপ করে, তখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১২ হাজার কোটি টাকার অংক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এর আগের তেইশ বছরের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ। ৮০ এর দশকে এরশাদ সরকারের শাসনামলের শেষ দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে মাত্র ৫শ' কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। '৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে এই রিজার্ভ বাড়তে থাকে।
স্বাধীনতা পরবর্তী চার বছরে মার্কিন ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি টাকার মান শতকরা ২২ দশমিক ৭৪ ভাগ কমে গিয়েছিল। ১৯৯৫ সালে টাকার মান কমেছিল মাত্র শতকরা ১.২৭ ভাগ। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ১ ডলার সমান ছিল ৭ দশমিক ৮৮ টাকা। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে তা ১৫ দশমিক শূন্য ৫ টাকা হয়।
মুদ্রা মূল্যের তুলনামূলক স্থিতিশীলতাকে দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মনে করা হয়। বিশ্ব অর্থনেতিক ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের মুখে মুদ্রামান সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকলে আর্থিক খাত বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারত। ১৯৯৩ সালে টাকাকে বিনিময়যোগ্য করা হয়। যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের আগে অনেকেই মনে করেছিলেন এর ফলে দেশীয় টাকা বিদেশি শক্তিশালী মুদ্রার সাথে অবাধ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। টাকার মান ব্যাপকভাবে কমে যাবে। কিন্তু কার্যত দেখা গেলো টাকার মান অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল ছিল এই সময়ে। ফলে বিদেশে বাংলাদেশি টাকার গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়েছিল।
মুদ্রামান হ্রাস প্রসঙ্গে অর্থনীতিবদদের মন্তব্য
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ টাকার ঘন ঘন অবমূল্যায়ন সম্পর্কে বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দাজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হারকে ধামাচাপা দেবার জন্যই সরকারকে বার বার টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে। এ ধরনের অস্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। ফলে শিল্পায়ন কাজ বিঘ্নিত হবে। রফতানি নির্ভর স্থায়ী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আর মকসুদ খান বলেন, আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা আমদানি করা কাঁচামাল নির্ভর। টাকার ঘন ঘন অবমূল্যায়নের ফলে শিল্পে ব্যবহার্য সকল কাঁচামালের দাম বেড়ে যাবে। ব্যাক-টু ব্যাক এলসি নির্ভর রফতানি পণ্যও তার প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা হারাবে। অর্থ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই মূলত টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে।
৮ জুলাই,2011 (শীর্ষ নিউজ ডটকম)
No comments:
Post a Comment